সাবিনা খাতুন
শীতের ছুটিতে আমি,রূপসা আর আরিশা আমরা তিন বন্ধুই শুধু ফ্লাটে আছি।অন্যরা সবাই শীতের ছুটিতে চলে গিয়েছে।আমরা তিনজন তিন রুমে থাকি।আমি আর রূপসা খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।আরিশার সাথে আমাদের এই ফ্লাটে এসে পরিচয়।আমরা ওকে খুব ভালো ভাবতাম।কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম আরিশা আমাদের দেখানোর জন্য ভালো ব্যবহার করত।এই বিষয়টা বোঝার পর থেকেই আরিশা আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করত না।এবার আসি মূল ঘটনায়।সেদিন রাতে বসে পড়ছিলাম।হঠাৎ দেখলাম আমার কলমটা খাতায় মূহুর্তের মধ্যে ভেঙে গেল।আমি চমকে গেলাম এবং এটাই শেষ না কলমটা থেকে রক্ত পড়ছে।আমি চিৎকার করলাম।রূপসা পাশের রুম থেকে দৌড়ে এলো কিন্তু আরিশা এলো না।আমি পাশে তাকিয়ে দেখলাম কলমটার কিছুই হয়নি।কলমটা আগের মতোই আছে।রূপসাকে ঘটনা বলার পর রূপসা বলল,”এটাতো কখনই সম্ভব না কারণ কলমটা তো এখনো ঠিকই আছে।মনে হয় তুই পড়ছিলি তাই ভুল দেখেছিস।”কিছুক্ষণ পর আরিশা এলো।ও বলল চিৎকার আমি শুনেছিলাম কিন্তু ব্যস্ত থাকায় আসিনি।সবটা শোনার পর ঐ কিছুই বলল না বরং হাসল।আমি এটা দেখার পর খুব রেগে গেলাম।আরিশাকে বললাম, “সান্তনা দিতে না পারলে দিবি না কিন্তু এতো মজা করবি কেন?রূপসা তো এগুলো করে না।”এটা শোনার পর আরিশা বলল, “কারণ আমি তোকে পছন্দ করি না।”এটা বলার পরের দিনই আরিশা বাসা ছেড়ে চলে গেল।আর এরপর থেকেই শুরু হলো আরও বড় ঘটনা।সেদিন রুমে বসে ছিলাম ভাবলাম রূপসার রুমে যাব।কিন্তু দেখলাম রূপসা ঘুমিয়ে আছে।হঠাৎ আরিশার রুমের দিকে তাকালাম।আমার রুমের লাইটের আলোতে দেখতে পেলাম আরিশা বসে আছে আর ওর আঙুল কেটে ঐ রক্ত কলমে ঢোকাচ্ছে।আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম আর মূহুর্তের মধ্যে আরিশা অদৃশ্য হয়ে গেল।পাশের রুম থেকে রূপসা ঘুম থেকে জেগে ছুটে আসল।সবকিছু বলার পর রূপসা বলল, “তোর পড়াশোনায় বেশি চাপ হয়ে যাচ্ছে,তুই একটু রেস্ট নে।”পরেরদিন সন্ধ্যায় ছাদে গেলাম।ছাদে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ দেখলাম আরিশা গাছের ডালে বসে আছে।আর মূহুর্তের মধ্যে ঐ আমার গলা টিপে ধরল।রূপসা ছাদে আসল আর আরিশা অদৃশ্য হয়ে গেল।এবার আর রূপসাকে কিছু বললাম না।কিছুক্ষণ থাকার পর রূপসা বলল,”চল বাসায় চলে যাই।”আমিও বললাম,”হ্যা চল।”রূপসা আগে সিড়ি থেকে নেমে দরজাটা খুলছিল।আমার তখন তিনটা সিড়ি নামার বাকি ছিল।হঠাৎ পেছন থেকে কেউ জোরে ধাক্কা দিল।আমি রূপসার উপর ধাক্কা খেয়ে পড়লাম।আমরা দুজনেই অনেক ব্যাথা পেলাম।রূপসা বলল,তোর সাথে এসব কী হচ্ছে?আমি ভাবলাম রূপসাকে সত্যি বললে ঐ ভয় পেতে পারে।তাই বললাম হোঁচট খেয়ে পড়ে গেছি।রাতে ঘুমাতে গেলাম।হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেল।মনে হলো কেউ যেন আমার গালে জোরে থাপ্পড় দিল।আমি উঠে বসলাম,দেখলাম আমার খাট শূন্যে ভাসছে।আর সেই মূহুর্তেই খাটটা জোরে নিচে পড়ল।আমিও নিচে পড়ে দেওয়ালের সাথে ধাক্কা খেলাম।মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা পেলাম।সেদিন রাতে আর ঘুম হলো না।সকালে উঠে জানতে পারলাম রূপসা আজকে থাকবে না।
সারাদিন একটু ভয়ে ভয়েই ছিলাম।রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম।হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল।ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে ৪টা বাজে।রান্নাঘরে কিছুর আওয়াজ পেলাম।গিয়ে দেখলাম আরিশা ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে আমায় বলছে,আজ তোর মৃত্যু হবে।এটা বলেই আরিশা আমার গলায় ছুরি মারতে আসলো।হঠাৎ আজান পড়লো আর আরিশা কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল।আমার গলা কিছুটা কেটে গেল।ভোরে মা-বাবা সবাইকে সবটা জানালাম।সকাল ৮টার মধ্যে এক কবিরাজের মাধ্যমে জানতে পারলাম আরিশা আমার উপর ব্লাক ম্যাজিক করেছে।কারণটা এটাই হতে পারে যে ঐ আমাকে পছন্দ করে না।ঐ আমার ক্ষতি করতে চায়।আরও জানতে পারলাম,ঐ এগুলোর সাথে আগে থেকেই জড়িত ছিল।তারপর ওকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।আর হ্যা রূপসাকেও সব বলেছিলাম।রূপসা বলল,ওর আগে থেকেই আরিশাকে সন্দেহ হয়েছিল।যায়হোক,কবিরাজ ব্লাক ম্যাজিক বন্ধ করতে পেরেছিল।মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম সেদিন।কেননা আরেকটু দেড়ি হলেই আমি আর বেঁচে থাকতাম না।সত্যিই সেদিন যা হলো
সেটা গল্প আকারে লিখলে,গল্পের নাম হবে ‘মৃত্যু যখন সামনে ‘
