স্কুলের তুমি

0
83

বি এম মিজানুর রহমান

অহনার জন্য আজো স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি।আসলে একসঙ্গে পড়লেও আমি ক্লাসে অন্যদের থেকে বছর চার অথবা পাঁচেক বড় ছিলাম।যদিও বন্ধুরা কেউ আমাকে কখনো ভাই ডাকে নি।কারণ হিসেবে আমি বুঝে নিয়েছিলাম আমার বন্ধুসুলভ মান মানসিকতাকে।তবে স্টুডেন্ট হিসেবে আমি মধ্যম সারির ছিলাম আর… অহনা? ওহ্,সে ছিলো বরাবরই শ্রেনীর ফাস্ট গার্ল।

শ্রেনীর পাঠ না বুঝলে বা গনিতের কোন সমস্যা না বুঝলে অহনা আমার শিক্ষক হয়ে যেতো।এভাবেই ছুটির আগে বা পরে অহনা আমাকে পড়াতো।অসম্ভব বুদ্ধিমতি আর আদুরে স্বভাবের অহনার প্রেমে পড়ে গেলাম আমি অজান্তেই। শ্রেনীর সকলে আমাকে গোপনে খেপাতে ছাড় ত না!তথাপি ওকে কিছু বলতে আমি নিষেধ করতাম।

পরিবারের আর্থিক সংকট ছিলো।বাবা আমাকে সৌদি আরবে পাঠানোর বন্দোবস্ত করতে ছিলো।পাসপোর্ট করতে আবেদন করেছি বলে অহনার সামনে কেঁদে ফেললাম। ছুটির পর লাইব্রেরিতে চলতো আমাদের আধা ঘন্টা বা চল্লিশ মিনিটের গ্রুপ স্ট্যাডি।এই দিন আর আমাদের পড়া হলো না।আমার শরীরে প্রথম অহনার হাতের স্পর্শ লাগলো।আমাকে অন্তত এসএসসি পাস করার পর পাঠাতে সে বাবাকে অনুরোধ করতে বললো।আমি বুঝতে পারলাম আমার সরলতা আর বিশ্বস্ততাকে সে ভালোবাসতো।

পরের দিন অহনা একটু আগেই স্কুলে চলে আসলো।আমি বরাবরই আমার ক্লাসের প্রথম ক্লাসে প্রবেশ করা ছাত্র। অহনা বললো ছুটির পরে একটু থেকো কথা আছে।আমিও বললাম,আমারও কিছু বলার আছে।সেদিন আর ক্লাসে মন বসে নি।ছুটির পরে আমরা দোতলার লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ থেমে অহনাকে জড়িয়ে ধরলাম,বললাম অহনা আমি তোমাকে ভালোবাসি। কেউ দেখে ফেলবে বলে সে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।আজ আর ভালো লাগছে না, আমি যাচ্ছি রাসেল বলে অহনা হেঁটে চলে গেল।ওর হেঁটে চলা পথের দিকে একরাশ বিস্ময় নিয়ে আমি তাকিয়ে রইলাম।আসলে মেয়েরা এতোটা স্নিগ্ধ হয় তা অহনার স্পর্শ ছাড়া আমি কখনো বুঝি নি!

আমার পাসপোর্ট হাতে এসে গেলো।এবার ভিসার জন্য অপেক্ষা ছিলো।সবার অলক্ষ্যে স্কুলের ভবনগুলোতে ঘুরেফিরে আমরা মনের কথা শেয়ার করতাম।আর মাঝেমধ্যে বুকের উষ্ণতায় অবুঝ ভালোবাসার অনুভূতি খুঁজে নিতাম।মিষ্টি চুম্বন ছিলো আমাদের সর্বশেষ সংযোজন। আমার ভিসা চলে আসলে আমি অহনাকে বিদায় জানাতে গেলাম।সেদিন আমরা দুজনে খুব কেঁদেছিলাম।আগে দুই একজন আমাদের সম্পর্কের কথা কানাকানি করলেও আজ ক্লাসের সবাই বুঝে ফেলে আমাদের ভালোবাসার কথা।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

অশ্রুজলে বিদায় নিয়ে সৌদি প্রবাসে থাকি।চিঠি লেখার মাধ্যম খুঁজে পেতেই বছর চলে গেলো।অনেকের মাধ্যমে পরে জানতে পারি অহনাকে অনেকটা জোর করে ওর বাবা এক সেনাবাহিনীর সৈনিকের সাথে বিয়ে দিয়েছেন।বছর আটেক পরে স্কুলের কাছে এসে স্মৃতিকাতর হয়ে যাই।খুঁজে ফিরি সেই স্কুলের তোমাকে!ভবনের গুপ্ত স্থানগুলো আরো বেশি তোমাকে ফিল করায়।স্কুলের তুমি অনেক ভালো থেকো,আজও ভালোবাসি তোমায়।হঠাৎ লাইব্রেরিয়ান ম্যাম শারমিন সুলতানা জানান,অহনা তোমার সাথে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেছিলো।সে তোমাকে খুব ভালোবাসতো।সে তোমার জন্য অপেক্ষা করবে বলে তার পরিবারকে জানিয়ে ছিলো।কিন্তু তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া তোমার পরিবারও ওকে মেনে নেয় নি।সকল প্রকার চেষ্টা অহনা করেছিলো তোমার জন্য সাগর।

শারমিন সুলতানা ম্যামের কথা শুনে নিজেকে অসম্ভব হতভাগা এবং দোষী মনে হচ্ছিল। স্কুলের তুমির জন্য হাহাকার বুকে আজও তাই চিরকুমার হিসেবে বেঁচে আছি।

Previous articleতানভীরের চোর ধরা
Next articleমৃত্যু যখন সামনে 
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here