নারীর বিবাহ

0
126

মোঃ মাহবুবুর রহমান

অনেক দেখাদেখি করার পর আমার ফুফাতো বোন নুপুর আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়ে অনেক জটিল ব্যাপার, কারণ, এপক্ষের পছন্দ হলে অন্যপক্ষের পছন্দ হয় না, আবার অন্যপক্ষের পছন্দ হলে এপক্ষের পছন্দ হয় না। যাক তাহলে কঠিন একটা সমস্যা থেকে বাঁচা গেল। নুপুর আপু ভালো মনের মানুষ।আমাদের মতো মানুষদের কাছে বিয়ে মানে কি যে আনন্দ তা বোঝাবো কেমন করে? আমরা অর্থাৎ আমি, আমার চাচাতো ভাই সিয়াম এবং ফুফাতো ভাই ইয়ামিন যে খুশি হইছি, নুপুর আপুর বিয়ে ঠিক হওয়াতে।
আগামীকাল বিয়ে, আজকেই আমাদের যেতে বলছে ফুফু। ফুফুু এবং ফুফা, নুপুর আপুর বিয়েতে অনুষ্ঠান করতে চাইছিল না, কারণ , বিয়েতে অনুষ্ঠান করার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়। কিন্তু বরের মা-বাবার জন্য অনুষ্ঠান করতে হচ্ছে, কারণ,এটাই তাদের পরিবারের শেষ বিয়ে। ফুফা,নুপুর আপুর বিয়ের অনুষ্ঠান করতে সবার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছে,একটা গরু ছিল তাও বিক্রি করে দিয়েছে। আমি আর আমার ভাই আজকেই যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার ভাইয়ের একটু অসুস্থতার জন্য আমরা দুজন আজকে যেতে পারলাম না।যার জন্য বিয়ের দিন সকালেই রওয়ানা দিলাম আমি আর আমার ভাই।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে


আমরা আজকে আসাতে ফুফু একটু রাগ করেছে মনেহয় আমাদের ওপর।ফুফু আমাদের বলে,আজকে আসলি ক্যান? তখন ভাই বলে, আমার অসুখের জন্য আসতে পারি নাই। গতকাল আসতে না পারায় আজকে সকাল সকাল চলে আসলাম। তখন ফুফু বলে, আচ্ছা, ঠিক আছে, তোরা চেয়ারে বসেক। আমি তোদের খায়তে দিই। খাওয়ার সময় শুনতে পাই, বরের পরিবার যৌতুক নিবে না বলে,সবাই বলাবলি করছে,বরের পরিবার টা ভালো আছে, ভালো মনের মানুষ তারা। আজকাল তো যৌতুক ছাড়া বিয়েই হয় না।এই কথা শুনে,নুপুর আপুর ছোট চাচি বলে,সরকারি চাকরি করলে হয়তো যৌতুক নিত, বর ব্যাংকের চাকরি করে, গ্ৰামে গ্ৰামে লোকের কাছ থেকে কিস্তির টাকা তোলে,তাই একটা মোটর সাইকেলের আবাস দিয়েছে, তার যাওয়া-আসা কষ্টকরের জন্য, একটা মোটরসাইকেল হলে ভালো হয়। তাছাড়া মেয়েকে তো আমরা গহনা দিয়েই পাঠাবো।
আমরা তো খালি হাতে পাঠাবো না।আমরা কোনো কিছুই না বলে, খাওয়া শেষে ওখান থেকে চলে আসি। বর ও কোলধারাদের জন্য গেট সাজানোর কারণে আমরা সবাই ব্যস্ত। আমি শুনলাম,বরযাএী আসবে দুই টার সময়, কিন্তু তারা আর আসে না। আমরা তাদের পথ চেয়ে থাকি।বরযাএী না আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, তাদের জন্য আমরা খাইতে পারছি না।বরযাএী আসার পর আমাদের খাইতে দিবে।যাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে তারা এবং মুরব্বিরা বরযাএী আসার আগেই খেয়ে উঠল। অবশেষে বরযাএীরা এলো পাঁচটার পরে। আমরা ছোটদের কে নিয়ে দড়ি ধরার জন্য গেলাম কিন্তু কাজ হলো না,পরে দড়ি না ধরেই চলে আসলাম গেটের কাছে। হালকা হালকা রাগ হচ্ছে,কারন,দড়ি ধরার টাকা টা পেলাম না।গেটের কাছে এসে গেটে বসল বরযাএী। সবকিছু খাওয়ার পর একজন কোলধারা বলে উঠলো,এখন কি করতে হবে। তখন আমি একটু অল্প শব্দ করে বললাম, আপনে কি আগে বিয়ে করেছিলেন?সে শুনে একটু রাগ করলো এবং মনে হয় একটু লজ্জাও পেয়েছে। অনেকই কথা টা শুনে হাসলো। তখন পাশ থেকে নূপুর আপুর বড় ভাই আমাকে বলে,চুপকর ,খালি বেশি কথা বলোস। আমি আর তখন কিছু বললাম না। গেটের টাকা আমরা যা চাইলাম তার অর্ধেকও দিল না,খান্চাতেও একই হলো। টাকা দেওয়ার সময় কত কথা তাদের। বরযাএীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সময় কত যে বকা শুনলাম আমাদের বাড়ির লোকদের কাছে। রাতে বাসর ঘরের টাকা নিয়ে ঝামেলা হলো। শুনলাম,তারা নাকি চাই,তারা গেটে আর খান্চাতে যত টাকা দিয়েছে তার চাইতেও এক হাজার টাকা বেশি। মেয়ে পক্ষ থেকে যে লোকটা গিয়েছিল,সে প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে যাই, এবং সবটাকা দিয়ে দেয়। আমরা বরদের বাড়িতে যাব সবাই কিন্তু শুনি বরপক্ষ যা এসেছিল ,তার চেয়ে কম যায়তে বলেছে। অনেকে যেতে পারলো না। রাতে আসার সময় বরের সাথে কোলধারারা মাইক্রো ছাড়া আসবে না। তাদের জন্য রাতে ভাড়া করা হলো মাইক্রো।কোলধারা এসেছে আটটা। এখন এতগুলো লুঙ্গি দেবে কিভাবে? সবাই মনে মনে তাদের গালি দিল,এত কোলধারা আসে কোনো বিয়েতে, তাদের কি হুশ নাই। তবুও লুঙ্গি জোগাড় করে দেওয়া হলো।এখন তারা শুবে কোথায়? বর, এবং কোলধারাদের জন্যই তিনটা ঘর লাগল। ভালো ভালো রুমে তাদের শোয়ার ব্যবস্থা করা হলো।এখন আমরা শুব কোথায়? ওমনি কষ্ট করে শুয়ে পড়লাম,একটা রাতই তো।

পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি,মানুষ আসবে প্রথম দিনের চেয়েও বেশি। ফুফা তো শুনে,কেমন জানি হয়ে গেছে,এত লোককে সে কিভাবে খাওয়াবে,সেই চিন্তায়।কারও কাছে টাকা ধার না পেয়ে, ফুফা সুদের উপর থেকে টাকা তুলে নিয়ে এসেছে। কিন্তু সেটা কেউ জানে না, পরে অবশ্য সবাই জেনেছে। রাতে নুপুর আপুকে নিয়ে গেল। রাতে শোয়ার সময়,একা একা নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম, মেয়েদের বিয়ে আসলে এমনই কি? একজন বাবার জন্য একটা মেয়ের বিয়ে দেওয়া এত কঠিন? মেয়েপক্ষের লোকেরা কি সব মেনে নেয়, ছেলেপক্ষ যা বলে? মনের ভেতরে থাকা প্রশ্ন গুলো অজানাই রয়ে গেল।

Previous articleআলোকময় জীবন
Next articleতামার দরজার ভেতরে
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here