ফাহাদ আনজুম
এ সময়ে আকাশে মেঘ থাকে না।
পত্রপল্লবে শোভিত গাছগাছালি সকালের স্নিগ্ধ রোদ মেখে হেসে ওঠে।
পাতায় পাতায় বাতাসের দোলায় ওঠে ঝিরঝির শব্দ — যেন গাছেরা নিজেদের ভাষায় আলাপ করে।
সবুজ পাতার আড়ালে হারিয়ে যায় ডালপালা,
আর দূরের উঁচু গাছগুলো ভোরের আলোয় নীরবে জেগে ওঠে।
আকাশের রঙে এখনো শরতের নির্মলতা মাখা।
কখনো কোথাও এক টুকরো মেঘ ভেসে বেড়ায়,
যেন শ্বেত বলাকার পালক, আকাশের বুকে স্থির হয়ে আছে।
ইরার খুব ইচ্ছে হয় — সে মেঘের কাছে গিয়ে হাত বাড়ায়।
ছুঁতে না পারলেও তার চোখের ভেতর জমে থাকে মেঘের মৃদু ছায়া।
মন যেন প্রশ্ন করে —
আর সেই প্রশ্নের উত্তরে নীল আকাশ নীরব থাকে।
হোস্টেলের ছোট্ট ঘরে ইরা সবার আগে জেগে ওঠে।
তার জানালার ধারে ভোরের আলো এসে পড়ে।
সকালে উঠে জানালার কাছে বসে থাকে সে — সূর্যোদয়ের অপেক্ষায়।
প্রথম আলোর লাল রেখা যখন ছুঁয়ে যায় আকাশের কিনারা,
ইরার চোখ মুগ্ধতায় স্থির হয়ে যায়।
তার ফোনের ক্যামেরা ভালো নয়।
ছবিতে সে এই রঙের খেলাটা ধরে রাখতে পারে না।
তবু ইরা মন খারাপ করে না —
কারণ সে জানে, চোখের দেখা কোনো ছবির ফ্রেমে ধরা পড়ে না।
আজ সকালটা অন্যরকম।
ঘুম ভেঙে ইরা জানালায় গিয়ে দেখে — আকাশে জমেছে মেঘ।
সূর্যের দেখা নেই।
গত সন্ধ্যায় হোস্টেলের ছাদে দাঁড়িয়ে যখন সূর্যাস্ত দেখছিল, তখন আকাশ ছিল নির্মল।
হোস্টেলের ডাইনিং রুমের টিভিতে বারবার জানানো হয়েছিল — বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ।
তবে ইরা ভাবেনি এত দ্রুত আকাশ এত ঘন হয়ে যাবে।
তবু সে দাঁড়িয়ে থাকে জানালার ধারে।
চোখ রাখে দূরের পাতায়, বাতাসের মৃদু দোলায়।
টিলার মাথায় নরম আলো ভাসছে।
পাতার ফাঁক দিয়ে আসছে একধরনের কোমল স্নিগ্ধতা।
প্রতিদিনের মতো আজও ইরা নিজের রুটিন ভাঙে না।
কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে ব্যালকনিতে, বুক ভরে নেয় ভোরের নির্মল বাতাস।
মনের ভেতর জমে থাকে এক অনুচ্চারিত প্রশান্তি।
হয়তো আজ সূর্যকে দেখা গেল না,
তবে ইরা জানে — প্রতিটি ভোরের অপেক্ষা, প্রতিটি আলোছায়া
একদিন মনের গভীরে রঙ ছড়াবে —
অদেখা কোনো ক্যানভাসে।
আজ কলেজে যেতে ইরার মন চায় না।
জানালার ধারে এক কাপ চা নিয়ে বসে থাকে সে।
চারপাশে সবকিছু যেন তার জন্য থমকে গেছে।
ফুলের পাত্রে জল দিতে দিতে তার চোখ পড়ে একে একে ফুলগুলোর দিকে।
অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে ইরা মনে মনে বলে,
“আচ্ছা, আজ যদি আমি মেঘের কাছে যেতে পারতাম,
তবে কি কিছু বলতাম ওকে?”
ফুলের পাত্রে একটা গোলাপের দিকে আঙুল বাড়িয়ে ইরা বলে,
“তুমি যেমন ফুটছো,
তেমন আমি কেন ফুটতে পারি না?”
গোলাপের পাপড়ি বাতাসে কাঁপে,
তবে কোনো শব্দ শোনা যায় না,
শুধু মৃদু ঝিরঝির শব্দ।
এ যেন ফুলের নিঃশব্দ উত্তর।
ইরা হেসে ফেলে,
“তবে তো আমি জানি,
যদি পাখির মতো উড়ে যেতে পারতাম,।”
একটা পাখি উড়ে গিয়ে ফাঁকা আকাশে স্নিগ্ধভাবে ডানা মেলে।
ইরার চোখের কোণে নরম এক টুকরো স্বপ্ন ঝুলে থাকে।
তবে আকাশের সেই স্বপ্ন একদিন পূর্ণ হবে —
এমন অজানা আশায় ইরা ডুবে থাকে।
নীল নীরবতার মাঝে ইরা খুঁজে ফেরে নিজেকে।”
